ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের চত্বর গজারকান্দি গ্রামের কৃষক সোহেল মোল্লা আজ এলাকার সফল কৃষক উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক অনন্য নাম। মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই নিজের শ্রম, মেধা ও উদ্যোগে তিনি গড়ে তুলেছেন একটি সফল নার্সারী, যা বদলে দিচ্ছে গ্রামের অর্থনীতি এবং স্থানীয় কৃষির চিত্র।
সোহেল মোল্লা পেশায় কৃষক। মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে পাঁচ সদস্যের তার পরিবার। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও কৃষিকাজের প্রতি তার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। বাবার সাথে কৃষিকাজে নিয়মিত সহযোগিতা করতেন তিনি। সেই থেকেই তার স্বপ্ন—কৃষিকে আধুনিক ও নতুনভাবে সাজানো। কিন্তু স্বপ্ন থাকলেও পথ ছিল অনিশ্চিত। এক পর্যায়ে জীবিকার অনিশ্চয়তায় বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতিও নেন সোহেল।
ঠিক এমন সময়েই তার জীবনে আসে মোড় ঘোরানো সুযোগ—এসডিসি’র (Society Development Committee) ‘আরএমটিপি: পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ’ ভ্যালু চেইন উপ-প্রকল্প। ২০২২ সালে প্রকল্পের মানদণ্ড অনুযায়ী তিনি নিরাপদ সবজি চাষী দলের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর হর্টিকালচার বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ পান, যেখানে তিনি শিখে নেন কিভাবে মাটিবিহীন কোকোপিটে নিরাপদ সবজির চারা উৎপাদন করা যায়।
এই প্রশিক্ষণই তার জীবনে এনে দেয় এক নতুন দিগন্ত। ২০২৩ সালে প্রকল্প থেকে ৪০,০০০ টাকা অনুদান পেয়ে মাত্র তিন শতক জমিতে তিনি নার্সারীর কাজ শুরু করেন। শুরুতে ১০০টি সিডলিং ট্রে দিয়ে কোকোপিট, ট্রাইকোডার্মা ও ভার্মি কম্পোস্টের মিশ্রণে চারা উৎপাদন শুরু করেন তিনি। প্রথম মৌসুমেই এলাকার কৃষকরা তার নার্সারী থেকে চারা সংগ্রহ করে ভালো ফলাফল পান, ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোহেলের সাফল্যের খবর।
ক্রমে তিনি নার্সারী সম্প্রসারণ করেন— এখন তার নার্সারী সাত শতক জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে। ট্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,২০০-তে। প্রতি মৌসুমে তিনি ৯০,০০০ থেকে ১ লক্ষাধিক চারা উৎপাদন করেন। তার নার্সারীতে উৎপাদিত ফুলকপি, বাঁধাকপি, মরিচ, টমেটো, বেগুন, পেঁপে, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, রেড ক্যাবেজসহ নানা জাতের চারা অনলাইন ও অফলাইনে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
চারা বিক্রির পাশাপাশি তিনি তিন একর জমিতে নিরাপদ সবজি চাষও করছেন। বর্তমানে তার নার্সারী থেকে বার্ষিক আয় প্রায় ৪ থেকে ৪.৫ লক্ষ টাকা, আর মাসিক গড় আয় ৩৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা।
সোহেল মোল্লা এখন আত্মনির্ভরশীল এক সফল কৃষক। তিনি বলেন, “আগে ভাবতাম বিদেশে না গেলে কিছু করা যাবে না। কিন্তু এসডিসি আমাকে দেখিয়েছে—নিজের গ্রামেই আছে সম্ভাবনার অগাধ ভাণ্ডার। এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি, আমার পরিবারও ভালো আছে।” ভবিষ্যতে নিজের নার্সারীর পরিধি আরও বাড়িয়ে, তিনি চান আরও অনেককে নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে। তার ভাষায়, “আমি চাই, মানুষ নিরাপদ সবজি খেয়ে সুস্থ থাকুক, আর গ্রামের মানুষ কৃষিকে ভালোবাসুক।” এসডিসি-আর এম টি পি প্রকল্পের সহায়তা ও দিক-নির্দেশনাই তাকে তার স্বপ্নের পথে পৌঁছে দিয়েছে—এ কথা জানিয়ে সোহেল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি।
সোহেল মোল্লা এখন আত্মনির্ভরশীল এক সফল কৃষক। তিনি বলেন,
“আগে ভাবতাম বিদেশে না গেলে কিছু করা যাবে না। কিন্তু এসডিসি আমাকে দেখিয়েছে—নিজের গ্রামেই আছে সম্ভাবনার অগাধ ভাণ্ডার। এখন আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আছি, আমার পরিবারও ভালো আছে।”
ভবিষ্যতে নিজের নার্সারীর পরিধি আরও বাড়িয়ে, তিনি চান আরও অনেককে নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে। তার ভাষায়, “আমি চাই, মানুষ নিরাপদ সবজি খেয়ে সুস্থ থাকুক, আর গ্রামের মানুষ কৃষিকে ভালোবাসুক।”
এসডিসি-আরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তা ও দিকনির্দেশনাই তাকে তার স্বপ্নের পথে পৌঁছে দিয়েছে—এ কথা জানিয়ে সোহেল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি।